সাবেকি রীতি মেনেই পুজো হয় শ্রীরামপুরের দাসবাড়িতে

Hits: 0

রাখী সাহা : ৫৭ বছরে পা দিল শ্রীরামপুরের দাসবাড়ির দূর্গাপূজা। ১৯৬৭ সালে এই বাড়িতে পুজোর সূচনা করেছিলেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী অনিল কুমার দাস। পুজোর শুরুতেই বাড়ির সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন অনেকের‌ই সংশয় ছিলো দূর্গাপূজার মতো এত বড় পুজোর উদ্যোগ নিয়ে, কারণ এই যে দুর্গাপুজোর খরচ কম নয়, রাজসূয় যঞ্জের সমান যেটা রাজা কিংবা জমিদারারদের পক্ষেই সম্ভব। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদিও নিজের ইচ্ছায় ও কর্মনিষ্ঠায় সেটা সম্ভব করে তিনি করে দেখিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে তাঁর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আত্মীয়-স্বজন সহ পাড়া পড়শিরা। সাবেকি সেই পূজা প্রাচীন রীতিনীতি ,নিয়ম মেনেই আজও চলে আসছে সমানভাবে। শ্রীরামপুরের ১৫/সি রাজা কে এল গোস্বামী ষ্ট্রিটের এই দূর্গাপূজা এখন মিলনোৎসব ও সম্প্রতির উৎসবে পরিনত হয়েছে ।

একচালার সাবেকি প্রতিমা। ডাকের সাজ। চাতরার কুমোরপাড়ার অমিত পালের হাতে তৈরী সুন্দর সাজের প্রতিমা। পূজো হয় বৈষ্ণব মতে। কোন পশুবলি হয় না। ষৈড়েশপ্রচারে পূজা।প্রাচীন রীতি মেনে ষষ্ঠীর দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় দাস বাড়ির এই পুজো। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে এই বাড়ির পূজো দেখার জন্য প্রচুর লোক সমাগম হয়।তারপর নবমীর দিন মধ্যাহ্ণে পাত পেড়ে প্রসাদ খাওয়া সেই রীতি এখনও চলে আসছে ,যাতে আমন্ত্রিত থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা সহ বিশিষ্ট অথিতিরা।

পূজার সময়ে স্হানীয় পাড়া পড়শীদের ভীড় মনে করিয়ে দেয় এটা শুধু দাসবাড়ির পূজা নয় এটা সর্বজনীন পূজো। বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ায় এই পুজোতে কোন পশুবলি হয় না।ডাকের সাজের একচালার এই সাবেকি প্রতিমা পুজো করার জন্য কামারপুকুর থেকে পুরোহিত আসেন । এছাড়াও সন্ধি পূজার সময়ে পদ্ম ফুল দেওয়া ও সারিবদ্ধভাবে সকলে মিলে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানোর দৃশ্যে মিলন ও সম্পৃতির বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলে এই পূজার মাধ্যমে।

প্রয়াত অনিল কুমার দাস ও তার সহধর্মীনী সোহাগ রাণী দাস যে পুজো শুরু করে গিয়েছিলেন তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের ছেলে মেয়েরা সেই পূজাকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন অত্যন্ত কুশলতার সঙ্গে। দাসবাড়ির সদস্য ডা: প্রদীপ কুমার দাস জানান পুজো মানেই মিলনের উৎসব,একে অপরের সাথে দেখা হওয়া,কাজের ফাকে একটু আনন্দ করা যা এই পুজোর সময়ে হয়ে থাকে।

পুজোর দিনগুলোর পাশাপাশি বিজয়া দশমীর দিনে পাড়ার সকলে মিলে সিন্দুর খেলা ও মাকে বিসর্জনের আগে বরণপর্ব অনুষ্ঠান মনে রাখার মতন। এছাড়াও বিসর্জনের সময়ে গঙ্গারঘাটে সকলের উপস্হিতি সৌহার্দ্য, সম্পৃতি ও মিলনোৎসবের বার্তা বহন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *