Hits: 8
কলমে-ডা. প্রদীপ কুমার দাস
তারিখ-৮.৮.২৩
৯ ই জৈষ্ঠ ১৩২৩ সাল। রবি ঠাকুর জাপানের পথে পাড়ি দিয়েছেন। সমুদ্রপথে জাহাজে করে রওনা দিয়েছেন। সঙ্গে আছেন শিল্পী মুকুল দে আর পিয়ারসন। বেশিরভাগ সময়ে দিনু ঠাকুর সঙ্গ দেন। দিনু ঠাকুর সঙ্গে থাকলে খুবই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন তিনি। এবারের জাপানযাত্রায় দিনু ঠাকুর সঙ্গে না থাকায় কিসের যেন একটা অভাব বোধ করছিলেন। যাত্রাপথে একদিন অবিশ্রান্ত ধারায় বৃষ্টি নামায় জাহাজের সারা ডেকটা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কোথায় জালশূণ্য জায়গা না পেয়ে জাহাজের এককোণে দাঁড়িয়ে গাইতে থাকেন: ‘ শ্রাবণের ধারার মত পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে/ তোমারি সুরটি আমার মুখের ‘ পরে। বুকের’ পরে।। সারারাত ওইভাবে কেটে যায়। পরেরদিন একটু বৃষ্টি থামতেই গানটাকে লিখে দিনুঠাকুরকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বর্ষা ঋতুতে আমরা রবিঠাকুরকে অন্যভাবে খুঁজে পাই। একসময়ে অমল হোম, দীনুঠাকুর ও কালিদাস নাগ শান্তিনিকেতনের বেণুকুঞ্জে বসে গানের আসর জমিয়েছেন। বাইরে শ্রাবণের ধারার মতন অঝোরে ঝরে চলেছে বষাার জলরাশি। চারিদিকে জলে থই থই। এমন ঘোর বর্ষার মধ্যে বর্ষাতি গায়ে রবি ঠাকুরকে দেখতে পেলেন দীনুদা। বর্ষার সঙ্গে বয়ে চলেছে এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া। ঝড়ো হাওয়ায় ঠাকুরের বেশবাস অসংলগ্ন হয়ে পড়ছে বারে বারে হাওয়ায় দুলছে তাঁর কেশরাশি ও লম্বা শুভ্ররাশি।ডানহাত দিয়ে চোখের চশমাটা ধরে ছুটে আসছেন রবি ঠাকুর। উনাকে দিয়ে চোখের চশমাটা ধরে ছুটে আসছেন রবি ঠাকুর। তাঁকে দেখে দীনু ঠাকর হঠাৎচেঁচিয়ে উঠে বললেন, ওই দেখো শ্রাবনের বর্ষা ধারায় ভিজতে ভিজতে উদাত্ত কন্ঠে গান গাইতে গাইতে আসছেন আমাদের দিকে। কিছুটা কাছে আসতেই শোনা গেল তাঁর গলায় গানের কলি: ‘ যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি/ ঝড় এসেছে, ওরে, এবার ঝড়কে পেলেম সাথি’।
১৯২১ সাল। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠান হচ্ছে। দর্শকাসন ভর্তি। বাইরে অঝোরধারায় শ্রাবণী বৃষ্টি ঝরে চলেছে। গুরুদেব উদাত্ত কন্ঠে একটা কবিতা আবৃত্তি করলেন। আবৃত্তি পাঠের শেষে বসতে যাবেন, সেইসময় দর্শকাসন থেকে এক দর্শক অনুরোধ করলেন, তাঁর ভিক্ষার ঝুলি কি অপূর্ণ থেকে যাবে? সে সময়ে উত্তরবঙ্গে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছিল।রবি ঠাকুর ভেবেছিলেন বোধহয় বানভাসী এলাকার দুর্গতের জন্যে কিছু দান সামগ্রী চাইছেন। কবি বললেন তাঁর সাধ্যমত তিনি দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে দর্শকটি জানান তিনি একটি ঠাকুরের গলায় গান শুনতে চান। সবেমাত্র বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন রবি ঠাকুর। গলার অবস্থাও খুব খারাপ। চিকিৎসকদের পরামর্শমত কোথাও গান গাইছেন না। এরকম অবস্থায় দর্শকদের ঐকান্তিক অনুরোধে তিনি সাড়া না দিয়ে পারলেন না। বাইরে শ্রাবণের ধারার সঙ্গে সায়ুয্য রেখে গাইলেন: ‘ আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার/ পরাণসখা বন্ধু হে আমার’।
নমস্কারান্তে
ডা. প্রদীপ কুমার দাস
শ্রীরামপুর, হুগলী, সূচক-৭১২২০১